একান্ত আপন

 একান্ত আপন

মাস্কাট ডায়েরি 

২ য় পর্ব

আমি যখন মাস্কাট আসছিলাম তখন একজন এর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল যার হাজব্যান্ড ডক্টর ছিল।উনি বলেছিলেন যে গাড়ির লাইসেন্স না থাকলে এসব জায়গায় জীবন পুরো স্তব্ধ হয়ে যাবে।এই কথার মানে তখন না বুজলেও পরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম।আসলে ঘটনাটা যেটা হয় সেটা হলো বিদেশে বাড়ির কাছে সবজিওয়ালা আসে না তাই যে কোনো কিছু কিনতে যেতে হবে সুপার মার্কেট,তখন গাড়ি না থাকলে খুব অসুবিধে।প্রচুর হাঁটতে হবে taxi ধরে মার্কেট যেতে আর সেটা বেশ এক্সপেনসিভ ও বটে।তারপর উইক এন্ড এ একটু বীচ যাব ,তখন ও taxi র জন্য wait কর সে একটা জঘন্য ব্যাপার।

আমরা বাড়ি ভাড়া পেয়েছিলাম মুমতাজ area তে যেখানে কাছাকাছি কোনো দোকান পাট নেই তাই রান্না করতে গিয়ে কোনো কিছু দরকার পড়লে প্রতিবেশী ই ভরসা ছিল।ওরাও অনেক বার আমার থেকে সাহায্য নিয়েছিল।এভাবেই পারস্পরিক সহযোগিতায় চলেছে অনেক সময়!

আমার হাজব্যান্ড তখন অফিস যাবার জন্য একটা প্রাইভেট পিক আপ ড্রপ এর গাড়ি ঠিক করেছিল যে ওকে রোজ অফিস এ পৌঁছে দিত আবার ছুটির পর বাড়ি ও পৌঁছে দিত ,২৫ রিয়াল নিত।যখন ও এই ব্যাবস্থা হয়নি তখন ও taxi তে যাতায়াত করত আর তাদের ফোন নম্বর নিয়ে রাখত যাতে আমরা কোথাও যেতে চাইলে ওরা ডাইরেক্ট বাড়ি থেকে তুলে নিতে পারে।কিন্ত taxi যেহেতু কস্টলি ছিল তাই আমাদের ইচ্ছে হলেও আমরা সব উইক এন্ড এ বেড়াতে যেতে পারিনি।

এভাবেই বেশ কষ্টে শিষ্টে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল।

তখন বাড়ির সব কাজ ও আমি করতাম,যদিও মাস্কাট এ কাজের লোক পাওয়া যায়।তার কারণ হল ওদের কাজের রেট, এত বেশি ( ঘণ্টায় ৪০০ টাকা) যে আমরা সেই সময় আফোর্ড করতে পারিনি।এখানে সাউথ ইন্ডিয়ান বা বাংলাদেশি কাজের লোক পাওয়া যায়।এমনকি রান্নার লোক বা গাড়ি পরিষ্কার করার অবধি লোক পাওয়া যায় ,যা অন্যান্য বিদেশ এ বিরল।আমরা শুধু গার্বেজ নেবার জন্য একটা ছেলে রেখেছিলাম যে শুধু আমার বাড়ি থেকে গার্বেজ নিয়ে ডাস্টবিন এ ফেলে দিতে ১২০০ টাকা নিত ( মাসে) , মানে ৬ রিয়াল।মুমতাজ area পাহাড়ি জায়গা তাই ভীষন চড়াই উৎরাই। সেই জন্য ওকে রাখা,পাহাড়ের নিচে গিয়ে গার্বেজ ফেলে বাড়ি তে ফিরতে গলা শুকিয়ে যেত গরমের সময়।খুব ই গায়ে লাগত কিন্ত এইটুকু করেছিলাম।

এই ভাবে চলতে চলতে আমার মেয়ে ও বড় হল আর ওকেও স্কুল এ ভর্তি করলাম।তখন দুটো বাচ্চার স্কুল ফিজ দিয়ে আমাদের যে কি অবস্থা হত সেটা আজ আমি ভাষায় ঠিক বুঝিয়ে উঠতে পারব না।প্রত্যেক মাসে মনে হতো কেও যেন আমাদের গলাটা টিপে ধরছে, এত আর্থিক কষ্ট ছিল! তখন আমার একটাই কথা ছিল " কেন এলে" এরকম চাকরি নিয়ে।কিন্ত তখন করার কিছু নেই কারণ এখানকার রুল অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দিলে অফিস কে ২০০০ রিয়াল ফেরত দিতে হবে যেটা আরো ইম্পসিবল,অতএব পড়েছি জবনের হাতে খানা খেতে হবে সাথে! এই ২০০০ রিয়াল হল ফার্নিচার এর জন্য ,এছাড়াও আমাদের ভিসা বাবদ ও যে টাকা ওরা খরচ করেছে সব ফেরত দিতে হবে,যদি আমরা চলে যাই।তাই আমাদের যাওয়া আর হয়নি,১২ বছর হয়ে গেল মাস্কাট এ।

ক্রমশঃ

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ