একান্ত আপন


picture source: Akanto apon

একান্ত আপন

আমি না ভগবান আছেন, না নেই সেই বিষয়ে ভীষন তর্কে জড়িয়ে পড়ি।সেটা আবার উচিত কি না, তাও একটা তর্কের ব্যাপার বটে।এই রকম ই একদিন আমি তো খুব হম্বি তম্বি করে প্রমাণ করেই দিয়েছিলাম যে ভগবান আসলে নেই!

সেইদিন উনি বোধহয় ওপর থেকে একটু মুচকি হেসে আমাদের কথা শুনছিলেন!

এত ভূমিকা করলাম শুধু একটা ঘটনা বলবো বলে।সেই দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার।আমার হাজব্যান্ড এর অফিস তখন ওইদিন এ হাফ ছুটি হতো।ও যথারীতি madinat sultan Qaboos রোড ধরে বাড়ি ফিরছিল।নরমালি ওই রাস্তায় ১২০ কিমি স্পীড এ গাড়ি চলে কিন্তু ওইদিন জ্যাম থাকায় মাত্র ৮০ কিমি স্পীড এ গাড়ি চলছিল। হঠাৎ কোথা থেকে একটা জীপ পাশ কাটিয়ে যাবার সময় ওর গাড়িতে একটুখানি লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।তারপর যা হয়ে ছিল লিখতে গিয়ে আজ ও শিউরে উঠছি!!

আমাদের গাড়িটা তখন চরকির মত বনবন করে ঘুরছে,ওর আর গাড়ির ওপর কোনো কন্ট্রোল নেই।সেই অবস্থায় ঘুরতে ঘুরতে ও গিয়ে আরেকটা গাড়িকে ধাক্কা মারে।সেই গাড়িটা তখন কন্ট্রোল হারিয়ে পাশের ডিভাইডার ক্রস করে উল্টে যায়।এর পর ই শুরু "ওনার" খেলা।কি সেটা?? বলছি।এত্ত বড় একটা অ্যাক্সিডেন্টের পরেও আমার হাজব্যান্ড বা ওই লোকটির কিচ্ছু হয়নি, মানে অদ্ভুত ভাবে ওরা বেঁচে গিয়েছিল সেদিন। পুরো ঝড় টা যেন গাড়ি দুটো সেদিন নিজেদের ওপর নিয়ে ওদের বাঁচিয়ে দিয়েছিল।কি অদ্ভুত না! কিছুদিন আগেই এমন একটা তর্ক করলাম আর তার কিছুদিনের মধ্যেই এরকম একটা ঘটনা আমায় ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়ে গেলো।

মনে হলো মানুষের চাওয়া নয়,ভগবানের ইচ্ছেই শেষ কথা।তারপর থেকে আমি আর কখনো এমন বাজে তর্ক করিনি।

**************************************************************************

একান্ত আপন

আমার হাজব্যান্ড আমায় যে অনেক রকম উপহার দেয় নানা কারণে তারমধ্যে বই অন্যতম।আমি বই পড়তে ভীষন ভালোবাসি।মাস্কাট এ থাকি বলে অনেক বাংলা বই আমি পিডিএফ এ পড়েছি ,কারণ কলকাতা থেকে বই তো আর সবসময় আনা সম্ভব হয় না তাই।আমার খুব খুব প্রিয় দুটো উপন্যাস হল " পূর্ব পশ্চিম" আর " প্রথম প্রতিশ্রুতি" ।কারোর বুঝতে কোনো অসুবিধে হবে না এমন সহজ ভাষায় সুন্দর করে লেখা।

কিন্তু আজ আমি এত গল্পের কথা বলছি কেন? কারণ আমি আজ গল্পই বলবো,সাই বাবার গল্প।

এই বছর দু এক আগে আমার হাজব্যান্ড ঈদের ছুটিতে শিরিডী গিয়েছিল সাই বাবার দর্শন করতে।তখন ওখান থেকে ও আমার জন্য একটা বই এনেছিল যেখানে বাবার নানা লীলা সম্বন্ধে লেখা আছে।অরিজিনাল বইটা মারাঠি তে লেখা।আমার জন্য ও বাংলা এডিশন টা এনে দিয়েছিল।আমার " শ্রী সাই সৎ চরিত্র" বই টি এত ভালো লেগেছে যে আমার মনে হলো এখান থেকে কিছু ঘটনা আমার সবার সাথে শেয়ার করা উচিত।

বাবার লীলা সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে আজ নিজেকে বড় ধন্য বলে মনে হচ্ছে।সত্যি তো কোনোদিন কি ভেবেছিলাম যে আমি ব্লগ লিখবো আর সেখানে আবার সাই বাবার কথা লিখব,ভাবিনি! আমার মনে হয় এটা বাবার ই ইচ্ছে।

বই টি লিখেছেন ঈশ্বর গোবিন্দ রঘুনাথ দাভোলকার( হেমাদাপন্থ) ।অনুবাদ করেছেন শ্রীমতী সুমনা বাগচী।

শ্রী সাই বাবার শিরিডী আগমন

শ্রী সাই বাবার মাতা,পিতা বা জন্মস্থান এর বিষয়ে কেও কিছুই জানে না।অনেক খোঁজা খুঁজির পরেও এ বিষয়ে কোনো সূত্র পাওয়া যায় নি।সাই বাবা শিরিডী র এক নিম গাছের নিচে,ষোলো বছরের তরুণ বালকের রূপে,ভক্তদের কল্যাণার্থে দেখা দেন। সেই সময়েও তাঁকে পূর্ণ ব্রহ্ম জ্ঞানী বলে মনে হত।তিনি মায়াকে দূরে রাখতেন আর মুক্তি তাঁর চরণে স্থান খুঁজত।তিনি সর্বক্ষণ ওই গাছের নিচে বসে থাকতেন, কারো বাড়ি যেতেন না।তিনি ত্যাগ আর বৈরাগ্যের প্রতিমূর্তি ছিলেন।বাবা নিম গাছ টিকে পবিত্র মনে করতেন আর খুব ই ভাল বাসতেন।মহালসা পতি আর শিরিডী র অন্যান্য ভক্তরা এই স্থানটিকে বাবার গুরুর সমাধিস্থল মনে করে সদা শ্রদ্ধায় প্রণাম করতেন।


বাবার পোষাক পরিচ্ছদ ও দৈনন্দিন কর্মসূচি

 তরুণ অবস্থায় বাবা কখনো নিজের চুল কাটেননি এবং তিনি সব সময় ই পালোয়ান দের মত পোষাক পরে থাকতেন। রহাতা গেলে ( শির্ডি থেকে তিন মাইল দূরে) সেখান থেকে তিনি গাঁদা, জুঁই ইত্যাদি গাছ কিনে আনতেন,আর সেগুলো পরিষ্কার করে মাটিতে পুঁতে নিজে জল দিতেন। এক ভক্ত ওয়ামন তাত্য়া তাঁকে রোজ দুটো মাটির ঘড়া দিত।বাবা ওটাতে করেই রোজ গাছে জল দিতেন।তিনি রোজ কুয়ো থেকে জল আনতেন আর সন্ধ্যার সময় ঘড়া দুটোকে নিম গাছের নিচে রেখে দিতেন।নিচে রাখতেই ওগুলো ভেঙ্গে যেত।পরের দিন ওই ভক্ত বাবাকে আবার দুটি নতুন ঘড়া দিত।এভাবেই তিন বছর চললো।শ্রী সাই বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম আর চেষ্টার ফলে একটি সুন্দর বাগান তৈরী হয়ে ছিল।আজকাল এই স্থানটি তে বাবার সমাধি মন্দিরের ভবন বিরাজমান,যেখানে সহস্র ভক্ত আসা যাওয়া করে।

সদগুরু শ্রী সাইনাথ মহারাজ কি জয়।

আজকের মত আমি শ্রী সাইবাবা এবং বাকি সবার থেকে বিদায় নিয়ে আমার লেখা শেষ করছি,আবার আসবো পরের সপ্তাহে,অন্য কোনো গল্প নিয়ে।





মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ