একান্ত আপন
একান্ত আপন
মাস্কাট এ শীতকালে ভীষন সুন্দর কিছু সাইট সীইং করা যায় , যার মধ্যে অন্যতম ডলফিন ওয়াচ।শীতকালে প্রচুর ডলফিন আসে মাস্কাট এর সমুদ্রে,আর আমাদের অনাবিল আনন্দ দিয়ে যায়।এরকম ই একবার january মাস এ আমার মা কে নিয়ে আমরা গেছিলাম ডলফিন দেখতে।তখন আমার মা মাস্কাট এ এসেছিল, আর আমরা চাইছিলাম মা কে এমন একটা জিনিস দেখাব যে মা এর সারা জীবন মনে থাকবে।
আমরা বেশ সকাল সকাল পৌঁছে গেছিলাম marina bandar al rouda যেখান থেকে বোট ছাড়বে।আমাদের টিকিট আগেই নেওয়া ছিল। এই ২০/২৫ জনের মত লোকের বসার ব্যাবস্থা।আমরা তো সবাই মিলে একদম পিছনের সিট এ বেশ গুছিয়ে বসলাম।কিন্তু যখন বোট ছেড়ে দিল আর গভীর সমুদ্রে ঢুকলো আমার তো হাত পা ভয় এ পেটের ভেতর! কারণ পিছনের ওই সিট গুলো জল থেকে এই দু ফুট মত ওপরে,কিন্তু তখন সামনে যাবার উপায় নেই।বোট ভীষন স্পীড এ চলছিল।মনে হচ্ছিল আমি যেন সমুদ্রের কোলে বসে আছি।ডলফিন দেখবো কি আমি তো ঠাকুর ডাকছি যাতে এ যাত্রায় বেঁচে ফিরতে পারি।আমাদের ক্যাপ্টেন তো নানা রকম আওয়াজ( কিছু স্পেশাল আওয়াজ) করে ডলফিন দের ডাকতে লাগলো।আর কি বলবো কিছুক্ষন এর মধ্যেই কোথা থেকে যে পাল পাল ডলফিন এসে গেলো আর আমাদের সাথে সাথে চলতে লাগলো।
মাঝে মাঝে তো ছোট গুলো ভল্ট ও দিচ্ছিল । আমরা যেদিন গেছিলাম ওয়েদার একটু মেঘলা ছিল বলে সমুদ্র অল্প রাফ ছিল।আর সেই জন্যই মাঝে মাঝেই সমুদ্রের ঢেউ আমাদের বোট এ ঢুকে এসে আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। আমার হাজব্যান্ড আর মেয়ে তো পুরো চান করে গিয়েছিল।আমার সেদিন জলের ওই বিশাল গভীরতা দেখে একটা কথা খুব মনে হচ্ছিল, যেন পৃথিবীর তিন ভাগের পুরো জল টাই এই ছোট্ট পরিধির মধ্যে সমায়িত হয়েছে।জলের মধ্যে ওদের ওই উদ্দাম লীলা দেখে আমরা ভাবছিলাম যে দেখ ওদের তো কেও ট্রেনিং দেয় নি, তাও কি সুন্দর ওরা আমাদের আনন্দ দিচ্ছে! আমরা কিন্তু কেও সেদিন লাইফ জ্যাকেট পড়িনি( বেশী সাহস) ।আমার খুব ইচ্ছে ছিলো পড়বো কিন্তু বাকিরা কেও যখন পড়ল না ,তাই আমি ভাবলাম যে যদি কিছু হয় মানে এই বোট যদি উল্টে যায় আর কি, আমি একা বেঁচে থেকে আর কি করবো,তাই আমিও আর লাইফ জ্যাকেট পড়লাম না। আশপাশ দিয়ে অন্য বোট গুলো যখন যাচ্ছিল আমি কিন্তু দেখেছিলাম যে সবাই ওই মহার্ঘ জিনিসটি গায়ে চাপিয়ে ছিল।আসলে আমার বাড়ির সবার বেশী লজ্জা।মা ও বলেছিল এই অথৈ জল এ সাঁতার জানলেও কিছুই করতে পারবো না।আমি তো সারাক্ষণ মা এর হাত টা শক্ত করে ধরেছিলাম।আসলে মা- বাবা যখন সাথে থাকে তখন ওই জায়গা টাই সবথেকে নিরাপদ বলে মনে হয়।যত বেশী ঠান্ডা থাকে তত ভালো হয় ট্রিপ।
মাস্কাট এ থাকেন অথচ ডলফিন ওয়াচ হয় নি,তারা অবশ্যই করে নেবেন।সারা জীবন বয়ে বেড়ানো যায় এমন সুন্দর একটি স্মৃতি।আমার মা তো বলে, ওহ! যা একটা জিনিস দেখিয়ে ছিলি,কোনো দিন ভুলবো না।
শীত কাল এ গালফ অফ ওমান এ ডলফিনের আসা একদম ই একটা প্রাকৃতিক ঘটনা তাই এই সময় রোজ ই যে ট্রিপ সাকসেসফুল হবে তার কোনো মানে নেই! হতেই পারে কোনোদিন একটাও এলো না!এই ট্রিপ ভাষায় ব্যক্ত করা বোধ হয় সম্ভব ই নয়,তবু আমি একটা ছোটো প্রচেষ্টা করলাম মাত্র।
** ওইদিন খুব হাওয়া আর ঢেউ এর এত দাপাদাপি ছিল যে আমাদের তোলা ছবিগুলো ভালো আসেনি,তাই অগত্যা গুগল এর দ্বারস্থ হয়েছি।
ডলভিন ওয়াচ না দেখলে বুঝতামনা যে মাছেরাও মানুষকে কতোটা আনন্দ দিতে পারে।আমিতো সারা জীবনে এই আনন্দের সময়টুকু ভুলতে পারবোনা।
উত্তরমুছুনSotti oshadharon obhigyota,sara jiboneo bholar noi.
উত্তরমুছুনDarun experience
উত্তরমুছুন