একান্ত আপন
একান্ত আপন
বেড়াতে গিয়েছিলাম।
৪ জুন আমরা এমিরেটস এ টিকিট কেটেছিলাম via দুবাই ব্যাঙ্কক যাবো বলে।আমরা প্রতি বছর এই সময় ছেলে মেয়ে র স্কুল এ গরম এর ছুটি পড়লে কলকাতা যাই,আর কোথাও যাওয়া হয় না।এদিকে আমরা ছেলে কে কথা দিয়েছিলাম যে ওর বোর্ড এক্সাম হলে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবো।তাই এক ঢিল এ দুই পাখি মারতেই ব্যাঙ্কক বেড়ানোর প্ল্যান করেছিলাম। মানে ৭ দিন মত ওখানে ঘুরে তারপর কলকাতা যাবো মায়ের কাছে।এই একটা মাস ই একমাত্র সময় যখন সব ডিউটি থেকে আমার ছুটি থাকে কারণ তখন সব দায়িত্ব মা এর।
যদিও ওই সময় টা ব্যাঙ্কক ঘোরার জন্য একদম ই ঠিক নয় কারণ হল প্রচন্ড গরম আর বৃষ্টি।সেটা জেনেও আমি আমার হাজব্যান্ড কে বলেছিলাম যে কলকাতায় গিয়েও আমরা কোথাও বেরোতে পারি না বৃষ্টির জন্য আর গরম ও সহ্য করি তাহলে বেড়াতে যেতে কি অসুবিধে।
যেই ভাবা সেই কাজ। যথা সময় এ টিকিট কেটে আমরা বেরিয়ে পড়লাম।ভিসা আগেই করা ছিল।via দুবাই হয়ে আমরা একদম ঠিক সময় এ সূবর্ণভূমি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার পোর্ট ব্যাঙ্কক এ পৌঁছলাম।নেমেই যেটা ফার্স্ট মনে হয়ে ছিল যে আমাদের মাস্কাট এয়ার পোর্ট অনেক অনেক সুন্দর। কিছুক্ষণ ওয়েট করার পর ওখানকার লোকাল ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি একটা টেম্পো ট্রাভেলার টাইপ এর গাড়ি পাঠিয়ে ছিল যেটা আমাদের pattya নিয়ে যাবে।আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল হোটেল দুসিত থানী,pattya (৫ স্টার) ।মোটামুটি ২১/২ ঘণ্টা লেগেছিল পৌঁছতে।আমরা যাবার সময় ম্যাক ডোনাল্ড এ একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম বার্গার কিনে খেতে খেতে যাবো বলে।
Pattya তে তখন সাজো সাজো রব! কারণ রাজামশাই ৪ থ মেরেজ করেছেন সবেই,রাণী মার নাম সুথিদা।
Pattya র weather ভীষন অদ্ভুত ছিল।এই বৃষ্টি তো এই একদম পরিষ্কার আকাশ।গরম একেবারেই নেই।দূসিতথানি ,তো কি বলবো,অসাধারণ হোটেল।আমরা মাস্কাট এ একবার আল বুস্তান
প্যালেস হোটেলে ছিলাম,ওটা যেমন অসাধারণ লেগেছিল,এটাও তেমনি লেগেছিল।
Dusit থানির ব্রেক ফাস্ট আমার আর আমার মেয়ে র তো বেস্ট বলে মনে হয়েছে কারণ প্রচুর ইন্ডিয়ান ফুড এর অপশন ছিল।সাধারণত ব্রেক ফাস্ট এ ডিম এর বিভিন্ন পদ,ফল ,ব্রেড আর নানারকম desert থাকে যা আমার আর মেয়ে র একেবারেই না পসন্দ।আমরা তাই যে তিনদিন ওখানে ছিলাম খুব ই তৃপ্তি সহকারে ব্রেক ফাস্ট সেরেছিলাম।
এতো গেলো ব্রেকফাস্ট এর কথা।dinner এর জন্য নেট খুঁজে দেখলাম যে কাছেই একটা বড়ো mall আছে টার্মিনাল ২১ বলে ওখানে একটা ইন্ডিয়ান ফুড এর দোকান আছে।ব্যাস পৌঁছে গেলাম, হাঁটতে হাঁটতে।হোটেল থেকে কাছেই ছিল।খুব সুন্দর mall।প্রথমেই যেটা দেখে অবাক হলাম সেটা হলো গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে একেবারে সেকেন্ড ফ্লোর এ escalater এ পৌঁছে গেলাম।এ হেন জিনিস মাস্কাট এ নেই,সেই প্রথম চাক্ষুষ করেছিলাম।সব দোকান পাট দেখতে দেখতে যখন পেটে ছুঁচো ডন দিচ্ছে তখন আমরা পৌঁছলাম ইন্ডিয়ান ফুড এর রেস্টুরেন্ট এ।কিন্তু মেনু কার্ড দেখে আমরা তো থ,কারণ খাবারের দাম মাস্কাট এর থেকেও অনেক অনেক বেশী ছিল।তন্দুরি রুটি,পনির এর একটা গ্রেভি,ভাল আর একটা মিক্স গ্রিল খাবার নিয়ে আমাদের ওই রাত এ ৮০০০ টাকা বিল হয়েছিলো।আসলে আমার সি ফুড এ অ্যালার্জি আছে বলে আমাদের পুরো ট্রিপ টা তেই এরকম ই অনেক বেশী টাকা দিয়ে ইন্ডিয়ান ফুড ই খেতে হয়েছিলো।আর এত টাকা খরচ করেও আমরা কিন্তু খাবারের কোয়ান্টিটি বা কোয়ালিটি কোনোটাই ভালো পাই নি,কোনো রেস্টুরেন্ট এই।
থাইল্যান্ড এর যে জিনিসটি আমার খুব ভালো লেগেছে সেটা হলো ওদের welcome জানাবার রীতি।কোথাও ঢুকলেই ওরা মিষ্টি হেসে বলবে "স্বদিখা" । ওদের মুখে শুনে শুনে আমরাও ওদের উইশ করেছি অনেকবার। থাইল্যান্ড এর লোকেদের আরো একটা গুন দেখলাম,ওরা খুব ই পরিশ্রমী আর punctual।
যাই হোক এবার আমাদের বেড়ানো সম্বন্ধে বলি।আমাদের পুরো ট্রিপ টা আমরা মাস্কাট থেকে সব রকম বুকিং করেই এসেছিলাম।কতদিনের সপ্ন ছিল আমিও pattya লেখা ওই পাহাড়টা দেখবো।ভগবানকে ধন্যবাদ উনি আমার সপ্ন পূরণ করেছেন।আমাদের সাইট সীন শুরু হয়েছিল ২ য় দিন থেকে কারণ প্রথম দিন তো আমরা পৌঁছেছিলাম অনেক দেরী করে তাই।
২ য় দিন -ঠিক ৮ টায় এসে গেলো আমাদের লেডি গাইড।সেদিন ও ই ড্রাইভ করে আমাদের চার জন কে নিয়ে গেলো বিগ বুদ্ধ
দেখতে।যাবার সময় তেই ওই pattya লেখা পাহাড় টা চোখে পড়ল আর অদ্ভুত এক তৃপ্তি তে মনটা যেন ভরে উঠলো ।ওখানে যখন পৌঁছলাম তখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে।কি আর করা,ছাতা মাথায় দিয়ে গাইড এর কথা শুনতে শুনতে বেশ অনেক সিঁড়ি ভেঙ্গে আমরা একটা পাহাড়ের ওপর পৌঁছলাম। যদিও বিগ বুদ্ধা এতই বিগ যে আমরা নিচে থেকেই দেখতে পেয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু ওপরে উঠে যেটা দেখলাম সেটা হলো সপ্তাহের সাত দিন বুদ্ধের সাত টা আলাদা রূপ,আর ছিল ওনার বিশাল পদচিহ্ন।আশ্চর্য হয়ে ছিলাম জুতো কোথাও ছাড়তে হয় নি বলে।ওখানে থাকতেই বৃষ্টি থেমে গিয়ে ছিল।প্রকৃতির এই খাম খেয়ালি পনা আমাদের কিন্তু বেশ লাগছিল।
ওখান থেকে আমরা গেলাম pattya ভিউ পয়েন্ট দেখতে,কিন্তু প্রবলেম হলো মেঘলা ওয়েদার এর জন্য।যেখান থেকে সবাই অসাধারণ pattya র ভিউ দেখে মুগ্ধ হয়,তখন আমরা শুধুই মেঘে ঢাকা pattya দেখে নিরাশ হয়ে গেলাম দেখতে মিনি সিয়াম।এখানে যাবার সময় বৃষ্টি হলেও যখন ওখানে পৌঁছলাম তখন বৃষ্টি থেমে গেছে আর বেশ রোদ ও উঠেছে, যার জন্য অল্প গরম ও হচ্ছিল।মিনি সিয়াম হচ্ছে একটা বিশাল পার্ক যেখানে পৃথিবীর কিছু বিখ্যাত দ্রষ্টব্য তৈরী করা আছে সবার দেখার জন্য। যার মধ্যে অন্যতম পিরামিড,ভিয়েতনামের বিখ্যাত আঙ্গকর ভাট টেম্পল,statue অফ লিবার্টি ইত্যাদি।আমার ছেলে মেয়ে তো ক্যাপ্টেন আমেরিকার শিল্ড হাতে তুলে এত আনন্দ পেয়েছিল যে কি বলব।এত বড় পার্ক যে পুরোটা দেখতে বেশ সময় লাগবে।এখানেই আমরা প্রথম টেস্ট করলাম coconut আইস ক্রিম,থাইল্যান্ড এর একটা খুব ই বিখ্যাত জিনিস,যা পরে আমরা ওখানে থাকাকালীন প্রচুর খেয়েছি।
দুপুরে আর কোথাও যায়নি,ইন্ডিয়ান লাঞ্চ সেরে হোটেল এ এসে একটু রেস্ট নিয়ে ইভনিং এ আমরা গিয়েছিলাম আর্ট ইন প্যারাডাইস দেখতে,ক্ক এটা একটা থ্রি ডি আর্ট মিউজিয়াম।সবাই আনন্দ পাবে এত সুন্দর জায়গা।
কোনো এক বিখ্যাত ম্যাগাজিনের কভার পেজ এ নিজের জায়গা করে নেওয়া থেকে মোনালিসা কে নিজেদের তুলিতে এঁকে ফেলার মতো আরো যে কত অসম্ভব কাজ আমরা এখানে সম্ভব করেছি যে কি বলবো!
অনেকেই হয়ত ভাবে থাইল্যান্ড মানেই অ্যাডাল্ট এন্টারটেইনমেন্টের ই জায়গা,তা কিন্তু একেবারেই নয়। বরঞ্চ থাইল্যান্ড এমন একটা পর্যটন স্থল যেখানে বাচ্ছা ,বড় সবার জন্য কিছু না কিছু দেখার বা করার আছে।
ক্রমশঃ











ভ্রমণ কাহিনি পড়তে সবাই ভালো বাসে এখানে লেখিকা আমার মেয়ে তা ই আমার গর্বে বুক ভরে যাছে।
উত্তরমুছুনথ্যাংক ইউ মা
উত্তরমুছুন